শিরোনাম
স্টাফ রিপোর্টার : বরিশালের ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সুবিদপুরে মসজিদের সভাপতি-মুয়াজ্জিনের সাথে মুসল্লীদের দ্বন্দ্ব চরম আকারে ধারণ করেছে।
এ নিয়ে মুসল্লীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর অভিযোগ ও লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন তারা। এমনকি মসজিদ নির্মাণ সংস্থার একজন গাড়ি চালকের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ দিয়েছেন মুয়াজ্জিন নুরে আলম। এতে ওই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দফায় দাফায় মীমাংসার জন্য বসেও কোন সমাধানে আসতে পারেননি তারা।
মসজিদ চত্বরে মুসল্লীরা এক প্রতিবাদে জানাচ্ছে। পাশাপাশি তারা চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনের দাবী জানান।
মুসল্লীরা জানান, কুয়েত সংস্থা সোসাইটি ফর সোস্যাল এন্ড টেকনোলোজিক্যাল সাপোর্টের উদ্যোগে সুবিদপুর এলাকার চারশত বছরের পুরোনো হাজী বাড়ি জামে মসজিদ নির্মিত হয়। এই মসজিদে শাহে আলম অবৈধভাবে প্রায় ২০ বছর ধরে পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সভাপতি পদে থেকে অবৈধভাবে তার আপন ভাই নুরে আলমকে মুয়াজ্জিন হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন।
মুসল্লীরা আরও জানায়, গত তিন মাসে কুয়েত সংস্থা থেকে প্রায় এক লাখ টাকা এসেছে। ওই টাকা আত্মসাত করার জন্য সভাপতি তার ভাইকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। এর প্রতিবাদ করলে মুসল্লীদের সাথে বিরোধ আরও চরম আকার ধারণ করে।
মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রব জানান, সভাপতি শাহে আলম মুসল্লীদের না জানিয়ে মুয়াজ্জিন পদে তার আপন ভাই নুরে আলমকে নিয়োগ দেয়। এই মুয়াজ্জিনকে কেন্দ্র করে যাবতীয় কেস-মামলা। মুসল্লিদের দাবী সভাপতি অব্যাহতি নিয়ে মুয়াজ্জিন থাকুক।
সভাপতি শাহে আলম বলেন, সে মসজিদ কমিটির দীর্ঘদিনের সভাপতি। কুয়েত সংস্থায় দাখিল করা কমিটির মেয়াদ ৫ বছর। সেই হিসেবে আরও কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। সায়েম মাস্টার তার কাছে ৬০ হাজার টাকার একটি ভাউচার পাস করার জন্য চাপ দেয়। বিষয়টি জানতে চাইলে সায়েম মাস্টার জানায় কুয়েত সংস্থাকে দিতে হবে। আর মুয়াজ্জিনকে সভাপতির ক্ষমতা বলে নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানান শাহে আলম। তবে বিষয়টি নিয়ে আগামী মঙ্গলবার মিমাংসায় বসবেন বলে জানান সভাপতি।
মসজিদের মুসল্লী আব্দুর রব মাঝি, গিয়াস উদ্দিন, মোঃ আসলাম, কামরুল, গোলাম মোস্তফা, মোঃ রহমান, মজিবর, আলতাফ হাওলাদার, মোঃ হারুন হাওলাদার, রবিউল আলমসহ আরও অনেকে জানান,
‘সভাপতি অবৈধভাবে মুসল্লীদের না জানিয়ে মুয়াজ্জিন হিসেবে তার ভাই নুরে আলমকে নিয়োগ দিয়েছেন। মুয়াজ্জিন হিসেবে নুরে আলম অযোগ্য দাবী করে প্রতিবাদ জানালে তাদের বিরুদ্ধে উল্টো থানায় অভিযোগ ও লিগ্যাল নোটিশ দেয়। আর মসজিদ নির্মাণে সংস্থা কোন চাঁদা বা টাকা দাবী করেন নি। তিনি (খলিল) তাদের (মুসল্লী) কাছ থেকে এক কাপ চাও খাননি। তারা বিষয়টি নিয়ে মিমাংসায় বসতে চাইলেও সভাপতি-মুয়াজ্জিন বসছে না।
মুসল্লীরা আরও জানায়, সভাপতি-মুয়াজ্জিনের এক ভাই এ্যাডভোকেট তার পরামর্শে এ ধরণের মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ দিচ্ছে। সাধারণ মুসল্লীরা বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধাণের জন্য সুশিল সমাজের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।’
নলছিটি থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ দেয়া মুয়াজ্জিনের মেয়ে নাঈমা নিতু জানান, তার বাবা নুরে আলম মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে থাকতে হলে কুয়েত সংস্থাকে এক লাখ টাকা দিতে হবে। টাকা না দেয়ায় তাদের উপর হামলা চালায় আসলাম, রহমান, সায়েম সহ অনেকে। তিনি এর সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন। সেটা যদি মিমাংসার মাধ্যমে তাতেও কোন সমস্যা নেই।
এদিকে নিতুর উপর হামলার অভিযোগটি মিথ্যা ভিত্তিহীন বলে দাবী করছেন আসলাম, রহমান ও সায়েমসহ অনেকে। তাদেরকে ফাঁসানোর জন্য পরিকল্পিত ভাবে অভিযোগটি দায়ের করেছেন বলে তাদের দাবী।
এ বিষয়ে কুয়েত সংস্থা সোসাইটি ফর সোস্যাল এন্ড টেকনোলোজিক্যাল সাপোর্টের গাড়ি চালক মোঃ খলিলুর রহমান জানান, অভিযোগের বিষয়টি তিনি অফিসের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। মসজিদটি তার মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে। যখন ইমাম মুয়াজ্জিনের বেতন আসা শুরু করল তখন থেকে সভাপতি ও সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। বিষয়টি একান্তই তাদের ব্যক্তিগত। এখানে চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি মিথ্যা ও ভানোয়াট। মুয়াজ্জিন নিয়োগ নিয়ে সভাপতির সাথে মুসল্লীদের দ্বন্দ্ব। সেখানে তাকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তার জানা নেই।