শিরোনাম

৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:২১

হাজার বছরের ঐতিহ্য আউলিয়াপুর বার আউলিয়ার দরবার 

ডেইলি বরিশাল সংবাদ সংবাদ সংগ্রহে সারাক্ষন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪ ২:২৬ পূর্বাহ্ণ
Print Friendly and PDF

মোঃ শাকিল আহমেদ,বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য বার আউলিয়ার দরবার।

এটি অবস্থিত রয়েছে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের আউলিয়া পুর গ্রামে। প্রায় হাজার বছরের ঐতিহ্য। এক সময় এখানে বারজন আউলিয়ার বসত ছিল তারা এখানে বসে ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। এক সময় বারজন আউলিয়া এখানে গায়েব হয়ে যান। এরপর থেকেই গায়েবি ভাবেই একটি মাজার হয়ে ওঠে।


উক্ত দরগার খাদেম আঃ মোতালেব তার বাড়ি রয়েছে সদর উপজেলার ভরপাশা গ্রামে পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে। তিনি এখানে প্রায় দুই বছর যাবৎ এই দরগার দেখা শোনা করেন। এর বিনিময়ে তিনি পারিশ্রমিক নেন না শুধু যাতায়াত খরচ নিয়ে থাকেন। তার সাথে কথা বলে আরও জানা যায় বারজন আউলিয়া এখানে গায়েব হয়ে যাওয়ার কারনেই নাম হয়েছে বার আউলিয়ার দরবার। এখানে শুধু মুসলিম ধর্মের লোকজনই কেবল আসেন না, বিভিন্ন ধর্মের লোকজন আসেন। প্রতি বছর ফাগুনের দোল পূর্ণিমায় ৩ দিন মেলা হয়ে থাকে।

আরও জানা যায়, এ দরবারে শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের আনাগোনা নয়, সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও আসেন পূজা দিতে। শতাব্দীর পর শতাব্দী এই দরবারে মুসলমানরা আদায় করছেন নামাজ, সনাতনীরা দিচ্ছেন পূজা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নবান্ন উৎসব। ফলে অসাম্প্রদায়িক চেতনার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে আছে বাকেরগঞ্জের বারো আউলিয়ার দরবার।

সরেজমিনে দেখা যায়, বারো আউলিয়ার মাজার ঘিরে রাখা পাকুড়গাছের শিকড়ে-ডালে অসংখ্য পলিথিন এবং কাপড় বেঁধে রাখা হয়েছে। ভক্তদের বিশ্বাস, মনের আশা পলিথিনে বা কাপড়ে লিখে এই গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখলে তা পূরণ হয়। আবার আশা পূরণ হলে তা নিজ দায়িত্বে খুলে ফেলতে হয়।

বারো আউলিয়ার দরবারটি ছিল মূলত আউলিয়াদের ধ্যানের জায়গা। স্থানীয় জমিদারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হলে সুড়ঙ্গ পথে নিরুদ্দেশ হন আউলিয়ারা। ভক্তরা মাজারের উত্তর পাশে সেই সুড়ঙ্গপথে দুধ ঢেলে দিত। যা কাছের একটি পুকুরে গিয়ে জমা হতো। সেই পুকুরটিকে বলা হয় দুধ পুকুর। আউলিয়ারা চলে গেলে স্থানীয় বিখ্যাত দরবেশ ফকির জালাল আরেফিন দরগাহ ও মাজারের তত্ত্বাবধান করেন। তবে দরবারের প্রতিষ্ঠাতা ফকির জালাল আরেফিনও নন। মূলত মাছিম শাহ নামে একজন পীরের বসবাসের স্থান ছিল ওই দরবার এলাকা। সেই মাছিম শাহ-বারো আউলিয়াদের দক্ষিণাঞ্চলে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বারো আউলিয়ার দরগায় এই মাছিম শাহের কবর রয়েছে।

পাকুড়গাছে আবৃত মাজারে প্রবেশের হাতের ডান দিকেই চোখে পড়বে একটি লম্বা আকৃতির কালো পাথর। পাথরের গায়ে তাজা সিঁদুর, সরিষার তেল। এই পাথরটি নিয়ে সঠিক কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। কেউ এটিকে বলেন শিব পাথর অনেকে বলেন শিবলিঙ্গ। নতুন বিয়ের পর নির্ধারিত তিথিতে পাথরটির মাথায় সিঁদুর ও সরিষার তেল দিয়ে যান নবদম্পতি। দেবতা শিবের সন্তুষ্টির জন্যই এই অর্চনা।

দরবারের পূর্বপাশে রয়েছে নারীদের নামাজের স্থান। ঐতিহাসিকদের মতে, প্রাচীন আমলে যে স্থানে মসজিদ ছিল, সেটি এখন বিলীন হয়ে গেছে। ওই আমলের একটি ঘাটলা ও দিঘির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের ধারণা, বর্তমানে যেখানে ঈদগাহ, সেখানেই ছিল মসজিদ ও ঘাটলা। যদিও এখন নতুন নকশায় আরেকটি দোতলা মসজিম নির্মাণ করা হয়েছে দরবারের মূল অংশে প্রবেশের মুখেই। একই দরবারে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শিব পাথরে পূজা ও মুসলিমদের নামাজ আদায় নিয়ে বিশেষ কোনো আপত্তি নেই কারও।

মাজারের খাদেম ও মোতোয়ালিরা বলছেন, বারো আউলিয়ার দরবার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সব ধর্মের মানুষের প্রার্থনার জন্য উন্মুক্ত ছিল। তেমনি শত শত বছর ধরে চলে আসছে এ নিয়ম। হিন্দুরা তাদের রেওয়াজ মেনে পূজা-অর্চনা করে চলে যায়। মুসলমানরা নামাজ আদায়, কবর জিয়ারত করেন। দোল পূর্ণিমা, লক্ষ্মী পূর্ণিমা ও অগ্রহায়ণ মাসের ১০ তারিখ ওরস মাহফিলের আয়োজন করা হয় এখানে।

 

 

হাজার বছরের ঐতিহ্য আউলিয়াপুর বার আউলিয়ার দরবার

মোঃ শাকিল আহমেদ, বামনা( বরগুনা)  প্রতিনিধিঃ

 

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য বার আউলিয়ার দরবার।

এটি অবস্থিত রয়েছে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের আউলিয়া পুর গ্রামে। প্রায় হাজার বছরের ঐতিহ্য। এক সময় এখানে বারজন আউলিয়ার বসত ছিল তারা এখানে বসে ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। এক সময় বারজন আউলিয়া এখানে গায়েব হয়ে যান। এরপর থেকেই গায়েবি ভাবেই একটি মাজার হয়ে ওঠে।

উক্ত দরগার খাদেম আঃ মোতালেব তার বাড়ি রয়েছে সদর উপজেলার ভরপাশা গ্রামে পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে। তিনি এখানে প্রায় দুই বছর যাবৎ এই দরগার দেখা শোনা করেন। এর বিনিময়ে তিনি পারিশ্রমিক নেন না শুধু যাতায়াত খরচ নিয়ে থাকেন। তার সাথে কথা বলে আরও জানা যায় বারজন আউলিয়া এখানে গায়েব হয়ে যাওয়ার কারনেই নাম হয়েছে বার আউলিয়ার দরবার। এখানে শুধু মুসলিম ধর্মের লোকজনই কেবল আসেন না, বিভিন্ন ধর্মের লোকজন আসেন। প্রতি বছর ফাগুনের দোল পূর্ণিমায় ৩ দিন মেলা হয়ে থাকে।

আরও জানা যায়, এ দরবারে শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের আনাগোনা নয়, সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও আসেন পূজা দিতে। শতাব্দীর পর শতাব্দী এই দরবারে মুসলমানরা আদায় করছেন নামাজ, সনাতনীরা দিচ্ছেন পূজা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নবান্ন উৎসব। ফলে অসাম্প্রদায়িক চেতনার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে আছে বাকেরগঞ্জের বারো আউলিয়ার দরবার।

সরেজমিনে দেখা যায়, বারো আউলিয়ার মাজার ঘিরে রাখা পাকুড়গাছের শিকড়ে-ডালে অসংখ্য পলিথিন এবং কাপড় বেঁধে রাখা হয়েছে। ভক্তদের বিশ্বাস, মনের আশা পলিথিনে বা কাপড়ে লিখে এই গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখলে তা পূরণ হয়। আবার আশা পূরণ হলে তা নিজ দায়িত্বে খুলে ফেলতে হয়।

বারো আউলিয়ার দরবারটি ছিল মূলত আউলিয়াদের ধ্যানের জায়গা। স্থানীয় জমিদারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হলে সুড়ঙ্গ পথে নিরুদ্দেশ হন আউলিয়ারা। ভক্তরা মাজারের উত্তর পাশে সেই সুড়ঙ্গপথে দুধ ঢেলে দিত। যা কাছের একটি পুকুরে গিয়ে জমা হতো। সেই পুকুরটিকে বলা হয় দুধ পুকুর। আউলিয়ারা চলে গেলে স্থানীয় বিখ্যাত দরবেশ ফকির জালাল আরেফিন দরগাহ ও মাজারের তত্ত্বাবধান করেন। তবে দরবারের প্রতিষ্ঠাতা ফকির জালাল আরেফিনও নন। মূলত মাছিম শাহ নামে একজন পীরের বসবাসের স্থান ছিল ওই দরবার এলাকা। সেই মাছিম শাহ-বারো আউলিয়াদের দক্ষিণাঞ্চলে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বারো আউলিয়ার দরগায় এই মাছিম শাহের কবর রয়েছে।

পাকুড়গাছে আবৃত মাজারে প্রবেশের হাতের ডান দিকেই চোখে পড়বে একটি লম্বা আকৃতির কালো পাথর। পাথরের গায়ে তাজা সিঁদুর, সরিষার তেল। এই পাথরটি নিয়ে সঠিক কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। কেউ এটিকে বলেন শিব পাথর অনেকে বলেন শিবলিঙ্গ। নতুন বিয়ের পর নির্ধারিত তিথিতে পাথরটির মাথায় সিঁদুর ও সরিষার তেল দিয়ে যান নবদম্পতি। দেবতা শিবের সন্তুষ্টির জন্যই এই অর্চনা।

দরবারের পূর্বপাশে রয়েছে নারীদের নামাজের স্থান। ঐতিহাসিকদের মতে, প্রাচীন আমলে যে স্থানে মসজিদ ছিল, সেটি এখন বিলীন হয়ে গেছে। ওই আমলের একটি ঘাটলা ও দিঘির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের ধারণা, বর্তমানে যেখানে ঈদগাহ, সেখানেই ছিল মসজিদ ও ঘাটলা। যদিও এখন নতুন নকশায় আরেকটি দোতলা মসজিম নির্মাণ করা হয়েছে দরবারের মূল অংশে প্রবেশের মুখেই। একই দরবারে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শিব পাথরে পূজা ও মুসলিমদের নামাজ আদায় নিয়ে বিশেষ কোনো আপত্তি নেই কারও।

মাজারের খাদেম ও মোতোয়ালিরা বলছেন, বারো আউলিয়ার দরবার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সব ধর্মের মানুষের প্রার্থনার জন্য উন্মুক্ত ছিল। তেমনি শত শত বছর ধরে চলে আসছে এ নিয়ম। হিন্দুরা তাদের রেওয়াজ মেনে পূজা-অর্চনা করে চলে যায়। মুসলমানরা নামাজ আদায়, কবর জিয়ারত করেন। দোল পূর্ণিমা, লক্ষ্মী পূর্ণিমা ও অগ্রহায়ণ মাসের ১০ তারিখ ওরস মাহফিলের আয়োজন করা হয় এখানে।

শেয়ার করুন :

বরিশাল সংবাদ ২৪

বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন।

বরিশাল সংবাদ ২৪

Call

নামাজের সময়সূচি
October 9, 2024
Fajr 4:37 am
Sunrise 5:49 am
Zuhr 11:45 am
Asr 3:59 pm
Maghrib 5:41 pm
Isha 6:53 pm
Dhaka, Bangladesh
October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

সংবাদ সংগ্রহে সারাক্ষণ