শিরোনাম
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের বেশিরভাগ দুর্গম এলাকায় ত্রাণ নেই। ওই সব দুর্গম এলাকায় পৌঁছায়নি সরকারি-বেসরকারি কোনোরকম ত্রাণ সহায়তা।
এমনিতে প্রত্যেক বছর জুমচাষের মৌসুমে চরম খাদ্য সংকটে পড়ে সাজেকবাসী। তার ওপর গত দুই মাস ধরে তারা লড়াই করছেন হামের সঙ্গে। হামে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে সাজেকের ৮ শিশু।
একই সঙ্গে এমন এক দুঃসহ লগ্নে হাজির প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাব। এতে দুর্বিষহ জীবন কাটছে সাজেকের অসহায় খেটে খাওয়া দুস্থ মানুষের। পড়ছে দুর্ভিক্ষের হাতছানি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয়রা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশের সব জায়গায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তার খবর শোনা গেলেও সাজেকে সেই ধরনের সহায়তা পৌঁছায়নি। সাজেক দেশের সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন। এর আয়তন ৬০৭ বর্গমাইল। ইউনিয়নটির বেশিরভাগ মানুষ নিম্ন আয়ের জুমচাষী, খেটে খাওয়া ও শ্রমজীবী।
তারা জানান, হাম মহামারীর সঙ্গে লড়াইয়ে এ এলাকার মানুষ সর্বস্বান্ত। একই সঙ্গে হাজির করোনাভাইরাসের প্রভাব। এমন পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে গেছে জুমচাষ। কর্মহীন ইউনিয়নবাসী প্রায় সবাই। করোনার কারণে রুদ্ধ দ্বার যার যার ঘরে। বেচাবিক্রির কিছুই নেই।
স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়নের ১৭৪ গ্রামের মধ্যে ১৩০টিতে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার ত্রাণের গন্ধও যায়নি। উদোলছড়ি, তুনজপ্পই, শান্তিপাড়া, নিউ থাংনাং, তারুমপাড়া, কজইছড়ি, ৯ নম্বর ত্রিপুরাপাড়া, ভুয়াছড়ি, মন্দিরাছড়া, রতনপুর, হালিমপাড়া, লংকর ঢেবাছড়াসহ সাজেকের ১৩০ গ্রামে করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি কোনোরকম ত্রাণ সহায়তা যায়নি।
এ সব গ্রামে ৭ হাজারের অধিক পরিবারের বসবাস রয়েছে বলে নিশ্চিত করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, তাদের কেউই ত্রাণ সহায়তা পাননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাজেকের বেশিরভাগ মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা পায়ে হাঁটা পথ। কয়েক গ্রামে নৌপথেও যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে। ১৩০ গ্রামের মানুষের জীবিকানির্ভর জুমচাষ ও কৃষিতে। এ সব গ্রামের মানুষ নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে ইউনিয়নের মাচালং বাজার, উজোবাজার, বাঘাইহাট বাজার ও ভুয়াছড়ি বাজারে। ওই সব গ্রামে সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নে কোনো ছোঁয়াই লাগেনি। ফলে যুগ যুগ ধরে দারিদ্র্যসীমার নিচে বঞ্চিত রয়ে গেছেন, ওই সব গ্রামবাসী।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ডহেন্দ্র ত্রিপুরা জানান, তার ৮নং ওয়ার্ডের ১০ গ্রামে ২৪৫ পরিবার রয়েছে। তারা কেউ করোনা পরিস্থিতির সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা পায়নি। তবে কিছুদিন আগে বেটলিংপাড়ার হামে আক্রান্ত ২০ শিশুর পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেলশন চাকমা বলেন, তার ইউনিয়নে প্রায় ৮ হাজার পরিবার আছে। তাদের মধ্যে দেড়শ’ পরিবারের মতো মানুষ কিছুটা সচ্ছল। বাকিরা সবাই নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র শ্রেণির। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেবল ৭-৮শ’ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য এ পর্যন্ত সরকারিভাবে মাত্র ৬ মেট্রিক টন চাল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জেলা পরিষদ থেকে ১০০ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে। জেলা পরিষদ থেকে আরও ৫ মেট্রিক টন চাল দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিব জিতু বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের সহায়তায় গোটা উপজেলার জন্য মাত্র ২৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তার মধ্যে সাজেক ইউনিয়নে ৬ টন দেয়া হয়েছে। সেগুলো ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ৬০০ পরিবারকে বিতরণের জন্য বলা হয়েছে।
এ ছাড়া যারা প্রকৃত কর্মহীন, অসহায় অথচ ত্রাণ পাননি- তাদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হবে। বরাদ্দ পেলে পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে বলে তিনি জানান।