শিরোনাম

৩রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১২:৫১

বরিশাল আছমত আলি খান (এ.কে.) ইনস্টিটিশনে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

ডেইলি বরিশাল সংবাদ সংবাদ সংগ্রহে সারাক্ষন

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৪ ৭:১৮ অপরাহ্ণ
Print Friendly and PDF

বরিশাল প্রতিনিধি ॥ বরিশাল নগরীর আছমত আলি খান (এ.কে.) ইনস্টিটিশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইরিন পারভিনের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক বরাবর অভিযোগ দিয়ে তার অপসারণ দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এসময় ২০২০ সালে আইন বহির্ভূতভাবে সাময়িক বহিষ্কার করা সাবেক প্রধান শিক্ষক এইচ এম জসীম উদ্দীনকে পুনরায় নিয়োগের দাবি জানান তারা।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আইরিন পারভিন স্কুলের ক্যাশিয়ার থাকাকালীন ২ লাখ ২০ হাজার ২৩১ টাকা আত্মসাত করেছেন। স্কুলের মালিকানাধীন ১০-১২টি স্টলের ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। তার ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে দুইবার সহকারী শিক্ষক পদে বিজ্ঞপ্তি দিয়েও নিয়োগ শেষ করেনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ করে ৩ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। দুইটি বাথরুম নির্মাণ করে প্রায় ২ লাখ টাকা এবং শিক্ষক মিলনায়তন আধুনিকায়নের নামে ৫ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। এছাড়া আত্মসাত করেছেন প্রধান শিক্ষকের অফিস বর্ধিতকরণ ও সু-সজ্জিতকরণের নামে প্রায় ৫ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপনের নামে ৩ লাখ টাকা এবং সাইকেল স্টান্ড নির্মাণের নামে ১ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। বিদ্যালয়ের মালিকানাধীন স্টলে দুইটি ব্যাংক ও একটি রেস্টুরেন্টকে ভাড়া দিয়ে প্রায় ৮ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। এর বাইরেও স্কুলের আসবাবপত্র বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন আইরিন পারভিন। এছাড়াও স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষককে উপদেষ্টা বানিয়ে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা অপচয় করেছেন। ১৭-১৮ জন খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ৭৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা অপচয় করেছেন আইরিন।

এছাড়াও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নিয়মিত প্রধান শিক্ষক এইচএম জসীম উদ্দীনকে মামলার জালে ফেলে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে আইরিন পারভিন দীর্ঘ তিন বছর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের এ দায়িত্ব পালনকালে শূন্য পদ থাকা সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেননি। কেননা সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিলে আইরিন পারভিনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব থাকবে না ফলে তিনি একদিকে নিয়মিত প্রধান শিক্ষক এইচএম জসীম উদ্দীনকে বিদ্যালয়ের বাইরে রেখে ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে দীর্ঘদিন বছরে ফেলে-ফুপে উঠেছেন।

এতে বিদ্যালয়টির প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখা দেয়ায় শিক্ষার মান ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এ বিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করেছে অনেক দেশ বরেণ্য ব্যক্তি। কালক্রমে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও প্রশাসনিক অবস্থা বেহাল অবস্থায ২০০৯ সালে সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) সিরাজুল ইসলাম এর সময় এইচ এম জসীম উদ্দীন প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ হন। প্রধান শিক্ষক এইচ এম জসীম উদ্দীন বিদ্যালয় যোগদান করার পর, স্কুলের শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক ও এলাকাবাসীদের সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ের সাবেক ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রাণপন চেষ্টা করেন। যার ফল শ্রুতিতে ২০০৯-২০২০ সালের মধ্যে বিদ্যালয়টি আবার বরিশাল শহরের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সু-খ্যাতি অর্জন করেন। ২০০/২৫০ ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১১০০/১২০০ শিক্ষার্থীতে পরিণত হয়। এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট মানসম্পন্ন, বিতর্ক প্রতিযোগীতায় সফলতার সুনাম অর্জন, স্কাউট প্রতিযোগীতায় পুরুস্কার প্রাপ্ত হন। বিশেষ করে প্রসাশনিক আকাঠামো সুন্দর ও গঠনমূলকভাবে চলতে থাকে। বিদ্যালয়ে অর্থনৈতি আয় বেড়ে যায় প্রায় চারগুন।

কিন্তু দুঃখের বিষয় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবু বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার সাথে সাথেই প্রধান শিক্ষক এইচ এম জসীম উদ্দিন কে বেসরকারি শিক্ষক চাকুরিবিধি ১৯৭৯ এর ১২ ও ১৩ ধারা উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ আইন বর্হিভূক্ত ভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দ্যেশে তাকে গত ২০ সালের ডিসেম্বর মাসে সাময়িক বহিষ্কার করে। পরবর্তীতে তাকে স্কুুল ও বাসভবন থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন সংখ্যা: শিম/মা: ১১/১০-১১/২০০৯/১৭১ এ বলা আছে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ম্যানেজিং কমিটির, এ ব্যাপারে এডহক কমিটির সভাপতি আইনী কোনো তোয়াক্কাই করে না। এখানেই তিনি ক্ষ্যান্ত হননি, তিনি রাজনৈতিক প্রভাববিস্তার করে প্রধান শিক্ষক এইচ এম জসীম উদ্দিনের নামে বিধিবর্হিভূত একটি অর্থ তরছুপ ফৌজদারি মামলা দায়ের করে।

সরকারি ভাতা গ্রহণভুক্ত কোনো কর্মচারির বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করতে হলে ঐ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রাধীন অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু কোনো অনুমতি না নিয়ে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাবে মামলা দায়ের করে তাকে চার বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য করে। প্রধান শিক্ষক এইচ এম জসীম উদ্দিন কে বের করে সহকারী শিক্ষক মোসা. আইরীন পারভিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের আসনে বসিয়ে শুরু করে বিদ্যালয়ের অর্থ লুটপাট ও নানা অনয়িম দুর্নীতি। বিদ্যালয়ের লেখাপাড়ার পরিবেশ নষ্ট করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সাবেক সভাপতি হাসান মাহামুদ বাবু।

নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, আগে যিনি প্রধান শিক্ষক ছিলেন অর্থাৎ জসিম উদ্দিন স্যার সে আমলে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার মান এবং কেয়ার ছিলো অন্য রকম। কিন্তু তাকে তাড়িয়ে দেয়ার পরে আমাদের বাচ্চারা সেই পড়ার পরিবেশ হারিয়েছে। বিশেষ করে এখন কোচিং বানিজ্যটা চলছে রমরমা। আমাদের সন্তানরা বিদ্যালয়ে না গিয়ে কোচিং এর টাকা দিলেই পাশ করিয়ে দেয়া হয়। আর যদি টাকা না দেই তাহলেই সেই শিক্ষার্থীকে ফেল করিয়ে দেয়া হয়। এতে করে আমরা মনে করি সঠিক শিক্ষার অভাব হচ্ছে বর্তমানে। আমরা একাধিকবার এ বিষয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে অবহিত করলেও তিনি কোনো ভ্রুক্ষেপ করেননি বরং সভাপতির সাথে এ বিষয়ে আলাপ করে সিধান্ত জানাবে বলে আমাদের অভিভাবকদের আশ্বস্ত করেন। কিন্তু কয়েকদিন গেলেই আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।

আমরা অভিভাবকরা মনে করছি, এ ঐতিহ্যবাহি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে আমাদের বাচ্চারা সঠিক পড়াশুনা থেকে বঞ্চিত হবে। তাই আমাদের দাবি বর্তমান যে শিক্ষা উপদেষ্টা রয়েছেন তিনি আমাদের এ স্কুুলটির দিকে সু-নজর দিবেন। যাতে করে বরিশালের ঐতিহ্যবাহি এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পুনরায় শিক্ষা মান ফিরে পায়।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইরিন পারভিন বলেন, আমি স্কুলের সহকারী শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক না থাকার কারণে স্কুলের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। আমার বিরুদ্ধে কোন আর্থিক কেলেংকারী বা অনিয়মের অভিযোগ কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুসিকান্ত হাজং বলেন, এ বিষয়ে আমরা প্রাথমিক তদন্ত করে দেখবো। তাতে যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করতেই পারি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার বিভাগীয় উপ-পরিচালক মাহবুবা হোসেনের মুঠোফোনে কল দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন :

বরিশাল সংবাদ ২৪

বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন।

বরিশাল সংবাদ ২৪

Call

নামাজের সময়সূচি
November 3, 2024
Fajr 4:48 am
Sunrise 6:01 am
Zuhr 11:41 am
Asr 3:42 pm
Maghrib 5:21 pm
Isha 6:35 pm
Dhaka, Bangladesh
November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  

সংবাদ সংগ্রহে সারাক্ষণ