শিরোনাম
স্টাফ রিপোর্টার ::- রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের নয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নব-নির্বাচিত এডহক কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ কর্মী শাখাওয়াত হোসেন মনিরকে বাাঁচাতে মরিয়া হয়েছে উঠেছে বরিশাল জেলা ও সদর উপজেলা বাস্তুহারা দলের কয়েকজন নেতাকর্মী। রাতারাতি পূর্বের কমিটিতে থেকে একজন যুগ্ম আহবায়কের নাম কেটে সেখানে শাখাওয়াত হোসেন মনিরের নাম বসিয়ে নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ একাধিক নেতাকর্মীর। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
জানা গেছে- শাখাওয়াত হোসেন মনির সক্রিয় আওয়ামী লীগ কর্মী। বিগত ২০১২ সালে চরকাউয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্যাডে সভাপতি সুলতান আহমেদ খানের স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে শাখাওয়াত হোসেন মনির একজন সক্রিয় আওয়ামী লীগ কর্মী মর্মে প্রত্যয়ন দিয়েছিলেন। ৫ আগষ্টের পর নিজেকে রক্ষার্থে ভর করেন বরিশাল জেলা বাস্তুহারা দলের সভাপতি জসিম উদ্দিন মিলন ও সদর উপজেলা বাস্তুহারা দলের আহবায়ক শাহ আলম হাওলাদারের কাধে। এরপর থেকে মিছিল-মিটিং থেকে শুরু করে বাস্তুহারা দলের সব কার্যক্রম চলতো মনিরের দোকানে। এমনকি তাদের অর্থের যোগানদাতা হিসেবেও সুপরিচিতি লাভ করেন মনির।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে- ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর বরিশাল সদর উপজেলা বাস্তুহারা দলের ২৫ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেসময় ওই কমিটির ৪ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন এইচ এম মঞ্জু নামের এক ব্যক্তি। তবে মনির গ্রেফতারের পর রাতারাতি এইচ এম মঞ্জুর নাম কেটে থেকে শাখাওয়াত হোসেন মনিরের নাম বসিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করানো হচ্ছে। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাস্তুহারা দলের একাধিক নেতাকর্মী বলেন- ৫ আগষ্টের আগে মনিরকে বাস্তুহারা দলের কোন কার্যক্রমে দেখা যায়নি। সরকারের পতনের পর বাস্তুহারা কয়েকজন নেতার আশির্বাদে তিনি দলের পদ বাগিয়ে নিতে কয়েকটা মিটিংয়ে ছিলেন। তার দোকানে বসে সেই মিটিং করা হয়েছিল। তবে ত্যাগী নেতাদের চাপের মুখে ওই কমিটিতে তিনি স্থান পান নি। সম্প্রতি তাকে ওই কমিটির ৪ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক দেখানো হয়েছে। সেখানে ছিলো এইচ এম মঞ্জুর নাম। মনির দলের কয়েকজন নেতার সকল খরচ বহন করতেন বলে তারা জানান।
বরিশাল সদর উপজেলা বাস্তুহারা দলের সদস্য সচিব মোঃ সুমন হাওলাদার বলেন- ৫ আগষ্টের আগে শাখাওয়াত হোসেন মনিরকে বাস্তুহারা দলের কোন কার্যক্রমে দেখিনি। তবে ৫ আগষ্টের পরে তার নতুন বাজারের দোকানে বসে কয়েকটি মিটিং হয়েছে। তিনি যে আমাদের কমিটির যুগ্ম আহবায়ক তাও আমার জানা ছিলনা। আর আমি কমিটির সকলকে চিনিও না।
পূর্বে কমিটির প্যাডে ৪ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক এইচ এম মঞ্জু স্থানে কিভাবে শাখাওয়াত হোসেন মনিরের নাম আসলো সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’
এ বিষয়ে সদর উপজেলা বাস্তুহারা দলের আহবায়ক শাহ আলম হাওলাদার বলেন- মনির আওয়ামী লীগ করেনি। সে বিএনপির সাথেই ছিল। আমি যতদূর জানি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি হয়েছেন মনির। এ নিয়ে স্থানীয় দুটি গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছে। আমরা মনে করি সেই বিরোধের সূত্র ধরে একটি মহল পুলিশকে ব্যবহার করে মনিরকে আওয়ামী লীগ আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে।
৫ আগষ্টের আগে শাখাওয়াত হোসেন মনির বাস্তুহারা দলের কার্যক্রমে সক্রীয় ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন- হ্যা, সক্রীয় ছিল। তবে ব্যবসায়ীক কাজে ব্যস্ত ছিল বিধায় সকল কার্যক্রমে আসতে পারতো না।
এ বিষয়ে জানতে বরিশাল জেলা বাস্তুহারা দলের সভাপতি জসিম উদ্দিন মিলন বলেন- আমরা প্রথমে এইচ এম মঞ্জু নিয়ে কমিটি গঠন করি। পরে যেহেতু জানতে পারি এইচ এম মঞ্জু সরকারি চাকরি করে সেহেতু তাকে বাদ দিয়ে শাখাওয়াত হোসেন মনিরকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।
একজন আওয়ামী লীগ কর্মীকে দলের পদ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- মনির কখনোই আওয়ামী লীগ করেনি। সে আওয়ামী লীগের মামলায় কারাবরণও করেছে।
চরকাউয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্যাডে সভাপতি সুলতান আহমেদ খানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ওটা ভূয়া কাগজ। সুলতান আহমেদ খান এমন কোন কাগজ দেননি, উল্টো মনির আওয়ামী লীগ করে না এমন একটি কাগজ দিয়েছে।
সুলতান আহমেদ খান কাউকে প্রত্যয়ন দিয়ে আওয়ামী লীগ করে না এমন বিজ্ঞপ্তি দিতে পারে কিনা? এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি তিনি।