শিরোনাম
মধুমতি বিধৌত তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার একটি অনুন্নত জনপদের নাম টুঙ্গিপাড়া। বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া একটি উপজেলা। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ার ঐতিহ্যবাহী শেখ বংশে জন্মগ্রহণ করেন বাঙালির সংগ্রামের ইতিহাসের রাখালরাজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা শেখ সায়েরা খাতুন। বাবা-মা তাকে আদর করে ডাকতেন খোকা নামে। শোষিত-বঞ্চিত বাঙালির অধিকার আদায়ে জেল, জুলুম, হুলিয়া ও নির্যাতন ভোগসহ দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ছোট্ট খোকা একদিন নিজেই হয়ে যান একটি ইতিহাস।
আবির্ভূত হন বাঙালি জাতির ত্রাণকর্তা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও বাঙালির জাতির পিতা হিসেবে। হাজার বছরের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বিশ্ববরেণ্য নেতা।
টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ আহম্মেদ হোসেন মীর্জা বলেন, শেখ বোরহানউদ্দিন নামে একজন বুজুর্গ ব্যক্তি প্রায় তিনশ বছর আগে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ বংশের গোড়াপত্তন করেন। মোগল আমলের ছোট ছোট ইটের তৈরি চকমিলান দালানগুলো শেখ বংশের আভিজাত্য ও খানদান আজও বয়ে নিয়ে চলছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক এখন কেউ বেঁচে নেই। এ কারণে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এখন যেসব বক্তব্য পাওয়া যায় তার অধিকাংশের সঙ্গে বাস্তবতার অমিল রয়েছে।
টুঙ্গিপাড়ার শ্রীরামকান্দি গ্রামের আব্দুল হামিদ শেখ (১১০) বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হয় মূলত টুঙ্গিপাড়া জিটি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। বঙ্গবন্ধুর থেকে বয়সে বড় ছিলেন আব্দুল হামিদ শেখ। তিনি বঙ্গবন্ধুর উপরের ক্লাসে পড়তেন। বঙ্গবন্ধুর শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন অত্যন্ত বন্ধুবৎসল। সবসময় আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকতে পছন্দ করতেন। স্কুলে সহপাঠীদের নিয়ে খেলাধুলায় মত্ত থাকতেন। বন্ধুদের নিয়ে গাছ থেকে আম পেড়ে খেতেন।কেউ কিছু বললে নিজের পরিচয় দিতেই আর কেউ কিছু বলতো না।
তিনি বলেন, একবার স্কুলে তার এক সহপাঠীকে শিক্ষক পড়া জিজ্ঞাসা করলেন। ওই ছাত্র পড়া বলতে না পারায় শ্রেণি শিক্ষক তাকে বেত্রাঘাত করেন। পরে ওই ছাত্র বলল, তার বই না থাকায় সে বাড়িতে বসে পড়া মুখস্ত করতে পারেনি। বিষয়টি শিশু মুজিবের মনকে ভীষণভাবে ব্যথিত করে। পরে তিনি তার নিজের বইগুলো ওই ছাত্রকে দেন।
এরপর তিনি তার বাবার চাকরিস্থল গোপালগঞ্জে চলে যান। গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তিনি চতুর্থ শ্রেণিতে তিনি ভর্তি হন। ১৯৩৪ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯৩৬ সালে তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান মাদারীপুর মহকুমায় সেরেস্তাদার হিসেবে বদলি হন। সেখানে তিনি মাদারীপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এসময় চোখে গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত হন তিনি। কলকাতায় গিয়ে চোখের অপারেশন করা হলে ভালো হন। এসময় বঙ্গবন্ধুর পড়ালেখায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। ১৯৩৭ সালে তিনি আবার লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন।
বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমান আবার গোপালগঞ্জ আদালতে বদলি হয়ে আসেন। তখন তিনি গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ভর্তি হন। ওই সময় তিনি গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাংকপাড়ার নিজেদের বাসায় থেকে পড়ালেখা করতেন।
বঙ্গবন্ধুর চাচা শেখ কবির হোসেন বলেন, ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অন্ত্যন্ত উদার প্রকৃতির একজন মানুষ। শৈশবে তিনি আমাদের আদি বাড়ির সামনে সমবয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলাধুলা করতেন। খেলাধুলা শেষে বাড়িতে যে খাবার থাকতো তিনি তা সবাইকে নিয়ে খেতেন।
গোপালগঞ্জ জেলা সিবিবি’র সভাপতি অধ্যক্ষ আবু হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমানের সঙ্গে আমার বাবা আব্দুল হাকিমের বন্ধুত্ব ছিল। দুজনই আদালতে চাকরি করতেন। তিনি তার বাবার মুখে শোনা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নানা গল্প শুনেছেন।
বঙ্গবন্ধু মিশন স্কুলের ছাত্র থাকাবস্থায় তিনি তার গৃহশিক্ষক আব্দুল হামিদের অনুপ্রেরণায় মুসলিম সেবা সমিতি গঠন করেন। গরিব ছেলেদের পড়ালেখার খরচের জোগান দিতে সমিতির পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুষ্টি ভিক্ষার চাল সংগ্রহ করা হতো। পরে ওই চাল বিক্রি করে যে টাকা হতো তা দিয়ে গরিব ছাত্রদের তিনি বই ও খাতা-কলম কিনে দিতেন।
১৯৩৮ সালে বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা ও শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জে আসবেন খবরে মুসলমানদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের দায়িত্ব পড়ল। এ কমিটির সদস্যরা ওই দুই নেতাকে সংবর্ধনা দেবে।
ওই সময় শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক মুসলিম লীগের সঙ্গে মন্ত্রিসভা গঠন করায় হিন্দুরা ক্ষেপে যায়। ফলে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী থেকে তারা সরে যাচ্ছিল। হিন্দুরা চাইছিল যাতে সংবর্ধনা না হয়। কংগ্রেস নিষেধ করায় তারা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী থেকে সরে পড়ছিল।
বঙ্গবন্ধু সারাজীবন ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। হিন্দু মুসলমান সবার সঙ্গে তিনি ছিলেন সবসময় আন্তরিক। শেরেবাংলা ও সোহরাওয়ার্দীকে যে কোনো মূল্যে তিনি সংবর্ধনা দেবেন সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি মুসলিম ছাত্রদের সংগঠিত করে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করেন। অবশ্য কিছুসংখ্যক ছাত্র তাদের দলে যোগ দেয়। অবশেষে শেরেবাংলা ও সোহরাওয়ার্দী এলেন। সভা করলেন এবং অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করলেন। শহরে হিন্দুদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় গ্রাম থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ অনেক লোকজন আনা হয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
শেখ মুজিব তখন মিশন স্কুলের ছাত্র। শেরেবাংলা পাবলিক স্কুল ও সোহরাওয়ার্দী মিশন স্কুল পরিদর্শনে গেলেন। স্কুল পরিদর্শন শেষে সোহওয়ার্দীর সঙ্গে পরিচয় ও কথা হয় শেখ মুজিবের। কলকতা গেলে তিনি তার সঙ্গে শেখ মুজিবকে দেখা করার কথা বলেন। এরপর শেখ মুজিব ১৯৩৯ সালে কলকাতায় যান এবং সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে দেখা করেন। তিনি গোপালগঞ্জ মুসলিম লীগের সম্পাদক ও মুসলিম লীগ ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারি হলেন। এভাবেই শেখ মুজিবুর রহমান ধীরে ধীরে রাজনীতিতে প্রবেশ করতে শুরু করেন।
অপরদিকে ১৯৩৮ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ১৩ বছর বয়সে তার চাচাতো বোন শেখ ফজিলাতুন্নেসার (রেনু) সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, জেল-জুলুম ও আন্দোলন সংগ্রামের প্রেরণা হিসেবে তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের নামটিও জড়িয়ে আছে।
শেখ মুজিবুর
নামাজের সময়সূচি | |
---|---|
February 8, 2025 | |
Fajr | 5:19 am |
Sunrise | 6:32 am |
Zuhr | 12:12 pm |
Asr | 4:12 pm |
Maghrib | 5:53 pm |
Isha | 7:05 pm |
Dhaka, Bangladesh |