শিরোনাম

১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:১০

বঙ্গবন্ধুর আত্নজীবনীতে ভাষা আন্দোলন

ডেইলি বরিশাল সংবাদ সংবাদ সংগ্রহে সারাক্ষন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০ ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ
Print Friendly and PDF

বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে ভাষা আন্দোলনঃ    ফেব্রুয়ারি ৮ই হবে, ১৯৪৮ সাল। করাচিতে পাকিস্তান সংবিধান সভার (কন্সটিটিউয়েন্ট এ্যাসেম্বলি) বৈঠক হচ্ছিল। সেখানে রাষ্ট্রভাষা কি হবে সেই বিষয়ও আলোচনা চলছিল। মুসলিম লীগ নেতারা উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষপাতী। পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ লীগ সদস্যেরও সেই মত। কুমিল্লার কংগ্রেস সদস্য বাবু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দাবি করলেন বাংলা ভাষাকেও রাষ্ট্রভাষা করা হোক। কারণ, পাকিস্তানের সংখ্যাগুরুরও ভাষা হল বাংলা। মুসলিম লীগ সদস্যরা কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। আমরা দেখলাম, বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিস এর প্রতিবাদ করল এবং দাবি করল, বাংলা ও উর্দু দুই ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। আমরা সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলাম। এই সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিস যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করে একটা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করল। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কিছু শাখা জেলায় ও মহকুমায় করা হয়েছে। তমদ্দুন মজলিস একটা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান যার নেতা ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাশেম সাহেব।

এদিকে পুরানা লীগ কর্মীদের পক্ষ থেকে জনাব কামরুদ্দিন সাহেব, শামসুল হক সাহেব ও অনেকে সংগ্রাম পরিষদে যোগদান করলেন। সভায় ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চকে ‘বাংলা ভাষা দাবি’ দিবস ঘোষণা করা হল। সামান্য কিছু সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাড়া শতকরা নব্বই ভাই ছাত্র এই আন্দোলনে যোগদান করল। জগন্নাথ কলেজ, মিটফোর্ড, মেডিকেল স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বিশেষ করে সক্রিয় অংশগ্রহণ করল। মুসলিম লীগ ভাড়াটিয়া গুণ্ডা লেলিয়ে দিল আমাদের উপর। অধিকাংশ লোককে আমাদের বিরুদ্ধে করে ফেলল। পুরান ঢাকার কয়েক জায়গায় ছাত্রদের মারপিটও করল। আর আমরা পাকিস্তান ধ্বংস করতে চাই এই কথা বুঝাবার চেষ্টা করল। ১১ই মার্চ ভোরবেলা শত শত ছাত্রকর্মী ইডেন বিল্ডিং, জেনারেল পোস্ট অফিস ও অন্যান্য জায়গায় পিকেটিং শুরু করল। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে কোনো পিকেটিংয়ের দরকার হয় নাই। সমস্ত ঢাকা শহর পোস্টারে ভরে ফেলা হল। অনেক দোকানপাট বন্ধ ছিল, কিছু খোলাও ছিল। সকাল আটটায় জেনারেল পোস্ট অফিসের সামনে ছাত্রদের উপর ভীষণভাবে লাঠিচার্জ হল। একদল মার খেয়ে স্থান ত্যাগ করার পর আরেকদল হাজির হতে লাগল। ফজলুল হক হলে আমাদের রিজার্ভ কর্মী ছিল। এইভাবে গোলমাল, মারপিট চলল অনেকক্ষণ। নয়টায় ইডেন বিল্ডিংয়ের সামনের দরজায় লাঠিচার্জ হল। খালেক নেওয়াজ খান, বখতিয়ার (এখন নওগাঁর এডভোকেট), শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম. এ. ওয়াদুদ গুরুতররূপে আহত হল। তোপখানা রোডে কাজী গোলাম মাহবুব, শওকত মিয়া ও আরও অনেক ছাত্র আহত হল। আবদুল গনি রোডের দরজায় তখন আর ছাত্ররা অত্যাচার ও লাঠির আঘাত সহ্য করতে পারছে না। অনেক কর্মী আহত হয়ে গেছে এবং সরে পড়ছে। আমি জেনারেল পোস্ট অফিসের দিক থেকে নতুন কর্মী নিয়ে ইডেন বিল্ডিংয়ের দিকে ছুটেছি, এর মধ্যে শামসুল হক সাহেবকে ইডেন বিল্ডিংয়ের সামনে পুলিশ ঘিরে ফেলেছে। গেট খালি হয়ে গেছে। তখন আমার কাছে সাইকেল। আমাকে গ্রেফতার করার জন্য সিটি এসপি জিপ নিয়ে বার বার তাড়া করছে, ধরতে পারছে না। এবার দেখলাম উপায় নাই। একজন সহকর্মী দাঁড়ান ছিল তার কাছে সাইকেল দিয়ে চার পাঁচজন ছাত্র নিয়ে আবার ইডেন বিল্ডিংয়ের দরজায় আমরা বসে পড়লাম এবং সাইকেল যাকে দিলাম তাকে বললাম, শীঘ্রই আরও কিছু ছাত্র পাঠাতে। আমরা খুব অল্প, টিকতে পারব না। আমাদের দেখাদেছি আরও কিছু ছাত্র ছুটে এসে আমাদের পাশে বসে পড়ল। আমাদের উপর কিছু উত্তম মধ্যম পড়ল এবং ধরে নিয়ে জিপে তুলল। হক সাহেবকে পূর্বেই জিপে তুলে ফেলেছে। বহু ছাত্র গ্রেফতার ও জখম হল। কিছু সংখ্যক ছাত্রকে গাড়ি করে ত্রিশ-চল্লিশ মাইল দূরে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে আসল। কয়েকজন ছাত্রীও মার খেয়েছিল। অলি আহাদও গ্রেফতার হয়ে গেছে। তাজউদ্দীন, তোয়াহা ও অনেককে গ্রেফতার করতে পারে নাই। আমাদের প্রায় সত্তর-পঁচাত্তরজনকে বেঁধে নিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিল সন্ধ্যার সময়। ফলে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠল। ঢাকার জনগণের সমর্থনও আমরা পেলাম। তখন পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার অধিবেশন চলছিল। শোভাযাত্রা রোজই বের হচ্ছিল। নাজিমুদ্দীন সাহেব বেগতিক দেখলেন। আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে। ওয়াদুদ ও বখতিয়ার দু’জনই ছাত্রলীগ কর্মী, তাদের ভীষণভাবে আহত করে জেল হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এই সময় শেরে বাংলা, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী, তোফাজ্জল আলী, ডা. মালেক, সবুর সাহেব, খয়রাত হোসেন, আনোয়ারা খাতুন ও আরও অনেকে মুসলিম লীগ পার্টির বিরুদ্ধে ভীষণভাবে প্রতিবাদ করলেন। আবার শহীদ সাহেবের দল এক হয়ে গেছে। নাজিমুদ্দীন সাহেব ঘাবড়িয়ে গেলেন এবং সংগ্রাম পরিষদের সাথে আলাপ করতে রাজি হলেন। আমরা জেলে, কি আলাপ হয়েছিল জানি না। তবে সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে কামরুদ্দিন সাহেব জেলে আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং বললেন, নাজিমুদ্দীন সাহেব এই দাবিগুলি মানতে রাজি হয়েছেন; এখনই পূর্ব পাকিস্তানের অফিসিয়াল ভাষা বাংলা করে ফেলবে। পূর্ব পাকিস্তান আইনসভা থেকে সুপারিশ করবেন, যাতে কেন্দ্রে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হয়। সমস্ত মামলা উঠিয়ে নিবেন, বন্দিদের মুক্তি দিবেন এবং পুলিশ যে জুলুম করেছে সেই জন্য তিনি নিজেই তদন্ত করবেন। আর কি কি ছিল আমার মনে নাই। তিনি নিজেই হোম মিনিস্টার, আবার নিজেই তদন্ত করবেন এ যেন এক প্রহসন। আমাদের ১১ তারিখে জেলে নেওয়া হয়েছিল, আর ১৫ তারিখ সন্ধ্যায় মুক্তি দেওয়া হয়। জেলগেট থেকে শোভাযাত্রা করে আমাদের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে নিয়ে যাওয়া হল।

* ১৬ তারিখ সকাল দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রসভায় আমরা সকলেই যোগদান করলাম। হঠাৎ কে যেন আমার নাম প্রস্তাব করে বসল সভাপতির আসন গ্রহণ করার জন্য। সকলেই সমর্থন করল। বিখ্যাত আমতলায় এই আমার প্রথম সভাপতিত্ব করতে হল। অনেকেই বক্তৃতা করল। সংগ্রাম পরিষদের সাথে যেসব শর্তের ভিত্তিতে আপোস হয়েছে তার সকলগুলিই সভায় অনুমোদন করা হল। তবে সভা খাজা নাজিমুদ্দীন যে পুলিশি জুলুমের তদন্ত করবেন, তা গ্রহণ করল না; কারণ খাজা সাহেব নিজেই প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমি বক্তৃতায় বললাম, “যা সংগ্রাম পরিষদ গ্রহণ করেছে, আমা

শেয়ার করুন :

বরিশাল সংবাদ ২৪

বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন।

বরিশাল সংবাদ ২৪

Call

নামাজের সময়সূচি
March 15, 2025
Fajr 4:52 am
Sunrise 6:03 am
Zuhr 12:07 pm
Asr 4:26 pm
Maghrib 6:10 pm
Isha 7:22 pm
Dhaka, Bangladesh
March 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সংবাদ সংগ্রহে সারাক্ষণ