শিরোনাম
স্টাফ রিপোর্টার :: নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার ৫ মাস পর ১৪ নভেম্বর (মঙ্গলবার) আনুষ্ঠানিকভাবে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) মেয়র পদে দায়িত্ব নিয়েছেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে গত ১২ জুন সিটি নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন খায়ের আবদুল্লাহর ভাতিজা বরিশাল সিটির সদ্য সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। মনোনয়ন নিয়ে চাচা-ভাতিজার মধ্যে অস্থিরতা ও বিভক্তি ছড়িয়েছে বরিশাল আ’লীগের রাজনীতিতে। কীভাবে সেসব সামাল দেবেন? দায়িত্ব গ্রহণের আগে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ২০ হাজার টাকা নিয়ে ১৯৮১ সালে মোংলা বন্দরে ব্যবসা শুরু করি। আমার যা আছে, তা নিয়ে আমি খুশি।’ বরিশাল সিটি করপোরেশনের অবস্থা খারাপ। নগর ভবনের প্রশাসনিক অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। ‘দক্ষ ও অভিজ্ঞদের বাদ দিয়ে টোকাইদের নিয়ে সিটি করপোরেশন পরিচালনা করা হয়েছে। স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহি ছিল না।’ ‘কাজ করতে এসেছি, কেউ ঝামেলা করলে ছাড় দেব না’।”
চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা বলতে চাইলে সরাসরি কারও নাম উল্লেখ না করে বরিশালের নবনির্বাচিত মেয়র বলেন, ‘জীবনে অনেক উত্থান-পতন দেখেছি। আমি আল্লাহ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। আমার কোনো পিছুটান নেই। আমি কাজ করতে এসেছি, কেউ কোনো ঝামেলা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। দুষ্কর্ম করার পাঁয়তারা করলে কঠোর ও কঠিন ব্যবস্থা রয়েছে।’ শুধু ভাতিজার সঙ্গে নয়, খায়ের আবদুল্লাহর সঙ্গে তার বড়ভাই বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ পরিবারের দূরত্বের খবরও কারও অজানা নয়। সেই দূরত্বের কারণে নগরীর কালিবাড়ী রোড এলাকার পৈতৃক বাড়িতে না থেকে কালুশাহ সড়কে ভাড়া বাসায় অবস্থান করছেন খায়ের। এ বিষয়ে খুব বেশি কথা বলতেও রাজি নন তিনি। কেবল বললেন, ‘সম্পত্তির অধিকার ছেড়ে দিয়েছি। ব্যক্তিগত প্রসঙ্গের পর সিটি করপোরেশন নিয়ে আলাপের শুরুতেই নগর ভবনের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে খায়ের আবদুল্লাহ বলেন, মেয়র পদে শপথ নেওয়ার পর দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বরিশাল সিটির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গিয়েছেন জানিয়ে নতুন মেয়র বলেন, ‘বরিশালের বিষয়ে কোনো মন্ত্রণালয়ের সুনজর নেই। মন্ত্রণালয় থেকে আসা টাকা দিয়ে যা খুশি তাই করা হয়েছে। রাস্তার মাঝখানে পার্ক করা হয়েছে।’ কোনো কর্মকর্তা বরিশাল সিটিতে দায়িত্ব পালন করতে চান না দাবি করে খায়ের আবদুল্লাহ বলেন, ‘বছরের পর বছর সিটি করপোরেশনের সচিব, চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিভিন্ন পদ ফাঁকা পড়ে আছে। গত আগস্টের পর নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদটিও খালি। যারা এসব পদে নিয়োগ পেয়েছেন; তাদের ভয়ভীতি দেখানোর ফলে তারা কাজে যোগ দিচ্ছেন না।’ খায়ের আবদুল্লাহ আরো বলেন, তাকেও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। আগের মেয়র দায়িত্ব ছাড়ার আগে পরিচ্ছন্নতা কর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধি করেছেন। চুক্তিভিত্তিক কর্মীর সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে যেন তাদের বেতন দিতে না পারলে নতুন মেয়রকে রোষানলে পড়তে হয়। তবে ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না বলে আত্মবিশ্বাসী বরিশাল সিটির নতুন মেয়র। আগের পরিষদের দুর্নীতির বিষয়ে নগরবাসী অবহিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এজন্যই নগরের মানুষ ভোট দিয়ে আমাকে সিটি করপোরেশনে পাঠিয়েছে। তাদের সঙ্গে নিয়েই দুর্নীতির মোকাবিলা করব।’ সিটি করপোরেশনের বিগত দিনের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তের জন্য কমিটি গঠন ও অডিট করানোর জন্য শিগগিরই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। নগর ও সিটি করপোরেশনের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে খায়ের আবদুল্লাহ জানান, নগর ভবনের অবস্থাই ভালো না। ছাদ ও দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। নিজের খরচে ভবন মেরামত করিয়েছেন বলেও জানালেন নতুন মেয়র। গত পাঁচ বছরে নগরে কোনো উন্নয়ন হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, বেশিরভাগ সড়ক বেহাল। খাল সংস্কার না হওয়ায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়ে নগরবাসীর বোঝা বাড়ানো হয়েছে। প্লট বরাদ্দে সামান্যতম নিয়মও মানা হয়নি। হলুদ অটোরিকশার অনুমোদন দিয়ে নগরে যানজট বাড়ানো হয়েছে। সড়ক ও ফুটপাথে দোকান বসিয়ে পথচারী ও যান চলাচল বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। কাজ না করেও ঠিকাদার বিল নিয়ে গেছে। গত পাঁচ বছরে নির্দিষ্ট চারটি প্রতিষ্ঠান সব ঠিকাদারি কাজ পেয়েছে। এমন আরও অসংখ্য সমস্যার কথা তুলে ধরে খায়ের আবদুল্লাহ বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আমি নানা সমস্যায় জর্জরিত।’ এ থেকে উত্তরণে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি জানান, একটি নতুন বরিশাল গড়ার প্রত্যয় নিয়ে তিনি মেয়র হয়েছেন। এজন্য নগর ভবনকেন্দ্রিক পাহাড় সমান সমস্যা সামাল দেওয়ার পাশাপাশি নগরবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণেও কাজ করতে হবে। দুটি কাজ একসঙ্গে হবে না। তাই আগে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে মনোযোগ দেবেন বলে জানালেন নতুন মেয়র। জানা গেছে, মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর সাদিক আবদুল্লাহর ভূমিকায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। ভোটের মাঠে তিনি খায়ের আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারেন এমন শঙ্কায় মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরও সাদিককে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল দলের হাইকমান্ড। নির্বাচন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বরিশালেও যাননি সাদিক। অবশ্য ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নিয়ে চাচার জন্য ভোট চেয়েছিলেন। কিন্তু চাচার প্রতি ক্ষোভ যে তার মেটেনি, তা বোঝা গেছে তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে। চাচার কাছে মেয়রের দায়িত্ব হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা এড়াতে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই গত ৯ নভেম্বর পদত্যাগ করে নগর ভবন ছেড়ে গেছেন সাদিক। মেয়র না থাকায় প্যানেল মেয়রের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব বুঝে নিতে হয়েছে খায়ের আবদুল্লাহকে।