শিরোনাম
ধর্ম নিয়ে ব্যবসা আর নয়। ধর্মের নামে শোষণ উৎপীড়ন আর চলবে না। রাজনীতির ক্ষেত্রে ধর্মকে টেনে এনে স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা আর কেউ করতে পারবেন না— প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের এই দিনে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে এ কথা ঘোষণা করেন। নবী দিবস উপলক্ষে ২৭ এপ্রিল বায়তুল মোকাররম মসজিদে এক বিরাট সিরাতুন্নবী মাহফিলে বক্তৃতা করছিলেন তিনি।
কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘এরপরও যদি কেউ ধর্ম নিয়ে ব্যবসায় নামেন, তবে তাকে সমুচিত ফল ভোগ করতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সবাই তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় অধিকার পূর্ণভাবে ভোগ করতে পারবে। কারও ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘বিদ্বেষ নয়, অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি কোনোরূপ বিরূপ মনোভাব নয়, সবাই মিলে সুখের সম্প্রীতিতে বাস করে সোনার বাংলাকে একটি আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলুন।’
বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশকে এমন একটি আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলুন, যার ভিত্তি হবে ন্যায়। দুনিয়ার মানুষকে দেখিয়ে দিন, অন্তত এমন একটি মুসলিম রাষ্ট্র আছে, যেখানে ইনসাফ কায়েম হয়েছে।’
বাংলাদেশের চারটি রাষ্ট্রীয় আদর্শ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ ধর্মবিরোধিতা নয়। বাংলাদেশে সবাই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে পারছেন, পারবেন। মানুষের মধ্যে শতকরা ৮৫ জন মুসলমান আর তারা সবাই ধর্ম-কর্ম করছে।’
পাকিস্তান ও জামায়াতে ইসলামি
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় ইসলাম ধর্ম অবমাননাকারী পাকিস্তান, ধর্মব্যবসায়ী জামায়াতে ইসলামি ওয়ালাদের কঠোর সমালোচনা করেন। এদের বিভিন্ন ধর্মের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধ করেছে এরা এবং তারা ধর্মের নামে ইসলামের নামে ৯ মাস ধরে বাংলাদেশে বর্বর গণহত্যা চালিয়ে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে। দুই লাখ মা বোনের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে। এমনকি কচি কচি শিশুরাও এদের হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি। ইসলাম রক্ষার নামে পাকিস্তানি শাসকরা ২৪ বছর ধরে শুধু ইসলাম ‘রক্ষা’ করলেন। অথচ মেয়ে মানুষ আর মদের গন্ধ কোনও সময়ে তাদের মুখ থেকে যায়নি।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এই ২৪ বছরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানে মদ-জুয়া কিছুই নিষিদ্ধ হয়নি। অথচ বাংলাদেশে কলমের একটি খোঁচা দিয়ে এসব নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ সত্যিকারের ইসলাম কোথায় বজায় রয়েছে, তা বিচারের জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ইসলাম জাতীয়তাবাদের শিক্ষা দেয়।’ তিনি ইসলামের লেবাসধারী এক শ্রেণির লোকের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘এরাই দেশের লোক অথচ এদেশের ইতিহাসে হত্যা, মহিলাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার, প্রভৃতি দুষ্কর্মে পাকিস্তানি হানাদারদের সাহায্য করেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক, বিমা ও শিল্প জাতীয়করণ করা হয়েছে। এগুলো সব এখন দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সম্পদ। এগুলোকে কোনও বিশেষ এক শ্রেণির কুক্ষিগত হতে দেওয়া হবে না।’ তিনি ফতোয়াবাজির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘‘রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে কোনও ‘ফতোয়া’ সহ্য করা হবে না।’’
মুসলিম রাষ্ট্রবর্গ
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বীকৃতি দিয়েছে মালয়েশিয়াও। কিন্তু স্বীকৃতি দেয়নি ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মূল বলে যারা পরিচিত, আরবের সেই দেশগুলো।’ তিনি ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘সেই প্রকৃত বন্ধু যে বিপদের দিনে পাশে এসে দাঁড়ায়। পাকিস্তানের মুসলমানরা যখন আমাদের হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল, তখন এরাই আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল।’
মাদ্রাসা শিক্ষা
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘মাদ্রাসার ছাত্ররা এবারের মতো পরীক্ষা দিতে পারবে। তবে এরপর কী হবে, তা শিক্ষা কমিশন ঠিক করবে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন— মাদ্রাসাছাত্রদের মধ্যে যারা বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, তাদের ক্ষমা করা হবে না।’
শেরেবাংলার মৃত্যুবার্ষিকী
স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বোচ্চ মর্যাদার সঙ্গে শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের দশম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। দেশের সব মানুষ মিলাদ-মাহফিল ও সেমিনারের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অন্যতম নায়ক ফজলুল হকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। বঙ্গবন্ধু তার মাজারে যান এবং দোয়া করেন।
নামাজের সময়সূচি | |
---|---|
November 8, 2024 | |
Fajr | 4:51 am |
Sunrise | 6:04 am |
Zuhr | 11:42 am |
Asr | 3:39 pm |
Maghrib | 5:19 pm |
Isha | 6:33 pm |
Dhaka, Bangladesh |