শিরোনাম
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বুধবার বিকালে মাজেদ রাষ্ট্রপতির কাছে এ আবেদন করেন। কারা কর্তৃপক্ষ আবেদনটি বিকালেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়।
সেখান থেকে বঙ্গভবনে পৌঁছানো হয়। প্রাণভিক্ষার আবেদনটি বঙ্গভবনে পৌঁছার পরপরই তা খারিজ করে দেন রাষ্ট্রপতি। এটি প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় কারা কর্তৃপক্ষের সামনে দণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকছে না। তবে ফাঁসি কার্যকরের আগে সাধারণত পরিবারের সদস্যদের শেষবার দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়।
অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, খুনি মাজেদ প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন। আমরা আবেদনটি আজই (বুধবার) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়- বঙ্গভবনের একটি সূত্র তাদের নিশ্চিত করেছে, প্রাণভিক্ষার ওই আবেদন পৌঁছানোর পর তা খারিজ করে দেন রাষ্ট্রপতি।
এসবের আগে মাজেদের (৭২) বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন আদালত। বুধবার ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এম হেলাল উদ্দিন চৌধুরী এ মৃত্যু পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। সোমবার রাত ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ৪৪ বছর ৭ মাস ২১ দিন পর গ্রেফতার হন খুনি মাজেদ। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ দুর্ধর্ষ প্রকৃতির লোক।
বুধবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, সব বাঙালি জাতি আজকে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (অব.) মাজেদের গ্রেফতারের খবর শুনে ভীষণ উল্লসিত ও আনন্দিত। বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল, একটি স্বপ্নকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল, ক্যাপ্টেন মাজেদ ছিল তাদের অন্যতম।
এদিকে বুধবার দুপুরে কারাগার থেকে খুনি মাজেদকে আদালতে হাজির করা হয়। মৃত্যু পরোয়ানা জারির আগে বিচারক আসামি মাজেদের বক্তব্য শোনেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে তার ভূমিকা সম্পর্কে আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জবাবে মাজেদ বলেন, ওই সময়ে তিনি অন্যান্য অফিসারদের (খুনি) সঙ্গে ডিউটিতে ছিলেন।
তিনি কোনো বিষয়ই অস্বীকার করেননি। মাজেদ তার নাম-ঠিকানা আদালতকে জানান। চার্জশিটে দেয়া নাম-ঠিকানার সঙ্গে হুবহু মিলে যাওয়ার পর আদালত উচ্চতর আদালতের রায় ও মৃত্যুদণ্ডাদেশ তাকে পড়ে শোনান। এ সময় কাঠগড়ায় দাঁড়ানো খুনি মাজেদ নিশ্চুপ ছিলেন।
এদিকে মৃত্যু পরোয়ানা প্রস্তুত হওয়ার পর বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কোতোয়ালি থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা ও আদালতের এক কর্মচারী লালসালুতে আবৃত ওই মৃত্যু পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে দেন।
আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মাজেদকে গ্রেফতার দেখানো ও মৃত্যু পরোয়ানা জারির আবেদন করেন মামলার প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল। এ সময় ঢাকা জেলা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি খোন্দকার আবদুল মান্নান ও ঢাকা মহাগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু সঙ্গে ছিলেন।
আদালতের কার্যক্রম শেষে মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, মাজেদ মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে ল্যান্সার এবং আর্টিলারি ইউনিটকে একত্র করে কর্নেল ফারুক ও মেজর ডালিমের নেতৃত্বে সেদিন তারা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
জাতির পিতাকে হত্যা করে তারা বাংলাদেশের মানচিত্র ও ইতিহাসকে পরিবর্তন করতে চেয়েছে। গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় যে তিনি ক্যাপ্টেন মাজেদ কিনা? তিনি বলেছেন, হ্যাঁ আমি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট ছিলাম, লেফটেন্যান্ট ছিলাম, এরপর আমি ক্যাপ্টেন হয়েছিলাম।
পরে আমি ফিন্যান্স মিনিস্ট্রিতে চাকরি করেছি। তৎকালীন সময়ে এ খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। বিভিন্ন দূতাবাস এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের চাকরি দেয়া হয়েছিল। এ খুনি মাজেদ ডেপুটেশনে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেছেন। সেখানে উপসচিব হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি পালিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন।
অচিরেই মৃত্যুদণ্ডাদেশের কার্যকারিতা দেখতে পাব বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তার (খুনি মাজেদ) আপিল করার সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় হয়ে গেছে। চূড়ান্ত রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। বাকি আসামিদের যেখানে যে অবস্থায় পাওয়া যাবে, সেখানে থেকে ধরে এনে এ রায় কার্যকর করা হবে।
মাজেদ দুর্ধর্ষ প্রকৃতির লোক : তোফায়েল আহমেদ বলেন, মাজেদ একটা দুর্ধর্ষ প্রকৃতির লোক। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা ছাড়া, বাকি সবাইকে হত্যা করেছে। এমনকি খুনি মাজেদ আমার এপিএস ১৯৭৩ ব্যাচের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শফিকুল আলম মিন্টু, নামে কেউ আছে কিনা? আমি বুঝতে পেরেছিলাম। কারণ, খুনি মাজেদ আমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে তুলে নিয়েছিল।
উচ্চপর্যায়ের নির্দেশ পেলেই ফাঁসি কার্যকর : খুনি মাজেদকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির সেলে রাখা হয়েছে। কয়েদির পোশাক পরা অবস্থায় তিনি সেখানে দণ্ডপ্রাপ্ত সাধারণ বন্দিদের মতোই আছেন। তার আচার-আচরণ অনেকটাই স্বাভাবিক।
বুধবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি আবদুল মাজেদকে কারাগারে নিয়ে আসার পরপরই যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়। তাকে ড্রেস পরিয়ে ফাঁসির সেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
ওই সেলের সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন এক ডেপুটি জেলার। মাজেদের ফাঁসি কবে নাগাদ কার্যকর হবে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী জানান, এ বিষয়ে অমরা সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। নির্দেশনা পেলেই ফাঁসি কার্যকরে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত খোলা বিশেষ ব্যবস্থায় : সুপ্রিমকোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, আদালত ছুটিতে থাকায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি আবদুল মাজেদের বিষয়ে জরুরি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছিল না। তাই মঙ্গলবার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিমকোর্টের কাছে লিখিত আবেদন করেন। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বুধবার ওই আদালতের ছুটি বাতিল করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে একদল বিপথগামী সেনা সদস্য। ওই সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দীর্ঘদিন পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমণ্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালত ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন।
এভাবে ১৩ বছর ধরে চলা এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হলে দায়মুক্ত হয় বাংলাদেশ। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। আর ওই রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা। মাজেদ গ্রেফতার হওয়ার পর এখন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি পলাতক।
নামাজের সময়সূচি | |
---|---|
December 4, 2024 | |
Fajr | 5:06 am |
Sunrise | 6:22 am |
Zuhr | 11:48 am |
Asr | 3:35 pm |
Maghrib | 5:14 pm |
Isha | 6:31 pm |
Dhaka, Bangladesh |