শিরোনাম
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা অপরাধীদের শাস্তি ও অবাধ্যতার পরিণাম সম্পর্কে আয়াত নাজিল করেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে অবাধ্যতার পাপে কী ধরনের মহামারি, দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয় মানুষের অবগতির জন্য তা এভাবে তুলে ধরেছেন-
‘সুতরাং আমি তাদের উপর একের পর এক তুফান, পঙ্গপাল, উঁকুন, ব্যাঙ ও রক্ত প্রভৃতি বহুবিধ নিদর্শন পাঠিয়ে দিলাম। তারপরও তারা গর্ব করতে থাকল। বস্তুত তারা ছিল অপরাধপ্রবণ।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৩৩)
এ বিপদাপদ ও বালা-মুসিবত মানুষের জীবনে আসতেই থাকে। মুসলিম-অমুসলিম সবার জীবনেই আসে। তবে বিপদাপদে মুমিনের শানই আলাদা। হাদিসে পাকে প্রিয় নবী সে কথা এভাবে ঘোষণা করেছেন-
‘মুমিনের অবস্থা বড়ই বিস্ময়কর! তার সবকিছুই কল্যাণকর। আর এটি শুধু মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য, অন্য কারো নয়। সুখ-সচ্ছলতায় মুমিন শোকর আদায় করে ফলে তার কল্যাণ হয়। আবার দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদের সম্মুখীন হলে ধৈর্য্ ধারণ করে। ফলে এটিও তার জন্য কল্যাণকর হয়।’ (মুসলিম, ইবনে হিব্বান)
সুতরাং এ মহামারি বা যে কোনো ধরনের বিপদাপদ যেমনিভাবে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের মাধ্যম, তেমনিভাবে তা মুমিনের জন্য মাগফেরাত লাভের উপায়। এসব ক্ষেত্রে মুমিনের প্রথম কাজ হলো, ‘আকিদায়ে তাকদীর’ অন্তরে জাগ্রত করা।
অন্তরে এ বিশ্বাস রাখা যে, সবকিছু আল্লাহর হুকুমে হয়। যে কোনো মুসিবত থেকে তিনিই উদ্ধার করেন। জীবন-মরণ, লাভ-ক্ষতির মালিকও তিনি। আরোগ্য তাঁরই হাতে। আফিয়াত-সালামত এবং শান্তি ও নিরাপত্তার মালিক তিনি। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘পৃথিবীতে বা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি তা সংঘটিত করার আগেই তা লিপিবদ্ধ থাকে। আল্লাহর পক্ষে এটা খুবই সহজ। এটা এজন্য যে, তোমরা যা হারিয়েছ তাতে যেন তোমরা বিমর্ষ না হও এবং যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তার জন্য বেশি উৎফুল্লও না হও। আল্লাহ উদ্ধত ও অহংকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা হাদিদ : আয়াত ২২-২৩)
মহামারি করোনায় মানুষের উচিত, কুরআন উপলব্ধি করার। কুরআন অধ্যয়নের মাধ্যমে নিজেদের আল্লাহর অবাধ্যতাকে ফিরিয়ে রাখার। সুখের সময় যেমন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা তেমনি দুঃখের সময় ধৈর্যধারণ করেও সফল হওয়া জরুরি। আর এসবই কুরআনের মর্ম উপলব্ধির বিষয়।
আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উৎসাহ দিয়ে সুখবর দিয়েছেন। তাদের কোনো ক্ষতি হবে না, আল্লাহ যা নির্ধারিত করেছেন তা ব্যতিত। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘(হে নবী! আপনি) বলে দিন, আমাদের জন্য আল্লাহ যা নির্দিষ্ট করেছেন তা ব্যতিত আমাদের অন্য কিছু হবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপরই মুমিনদের নির্ভর করা উচিত।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৫১)
সুতরাং করোনাসহ যাবতীয় মহামারিতে মুমিনদের উচিত, কুরআন-সুন্নাহ উপলব্ধি করে সে অনুযায়ী জীবন সাজানো। আর কুরআন-সুন্নাহর আমলে বিপদ থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করা। কেননা মহামারির রোগ প্রতিরোধের চেয়ে মুমিনের ঈমানি শক্তির উপর নির্ভর করা অনেক বেশি ফলপ্রসু।
বিশেষ করে এ হাদিসের ওপর বেশি নজর দেয়া। যাতে এ কাজগুলো না ঘটে। আর তাহলো-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
– ‘যখন কোনো সম্প্রদায়ের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়বে এমনকি তারা সেগুলো প্রচার করতে থাকবে, তখন তাদের মধ্যে তাউন (প্লেগ) মহামারি আকারে দেখা দেবে এবং এমন সব ব্যাধি ও কষ্ট ছড়িয়ে পড়বে, যা আগের মানুষদের মাঝে দেখা যায়নি।
– যখন কোনো সম্প্রদায় ওজন ও মাপে কম দেবে তখন তাদের উপর নেমে আসবে দুর্ভিক্ষ, কঠিন অবস্থা এবং শাসকের যুলুম-অত্যাচার।
– যখন কোনো জাতি তাদের সম্পদের জাকাত আদায় করবে না তখন তাদের প্রতি আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। যদি জন্তু-জানোয়ার না থাকত তাহলে আর বৃষ্টিপাত হতো না।
– আর যখন কোনো জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে তখন আল্লাহ তাদের উপর কোনো বহিঃশত্রু চাপিয়ে দেবেন…
– যখন কোনো সম্প্রদায়ের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফায়সালা করবে না আর আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানসমূহের কিছু গ্রহণ করবে আর কিছু ত্যাগ করবে তখন আল্লাহ তাদেরকে পরস্পর যুদ্ধ বিগ্রহ ও বিবাদে জড়িয়ে দেবেন।’ (ইবনে মাজাহ)
সুতরাং মানুষের উচিত এ আমলগুলো করা-
>> তাকদিরের বিশ্বাস মনে জাগ্রত রাখা এবং তাকদিরের ওপর মজবুত ঈমান রাখা।
>> আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা এবং ঈমানি শক্তি জাগ্রত করা।
>> তাওবা-ইসতেগফার করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।
কুরআন-সুন্নাহ বর্ণিত দোয়া ও জিকিরের প্রতি মনোযোগী হওয়া। আর তাহলো-
– একনিষ্ঠতার সঙ্গে সুরা ফাতেহা পড়ে নিজেদের ওপর দম করা।
– মুআব্বিজ পড়ে (কুরআন মাজিদের শেষ তিন সুরা (ইখলাস, ফালাক ও নাস) পড়ে নিজেদের ওপর দম করা বা হাত বুলিয়ে নেয়া।
– প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া। ঘুমানোর সময়ও আয়াতুল কুরসি পড়া। আয়াতুল কুরসি হলো সুরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত।
– সকাল-সন্ধ্যা এ দোয়া পড়া-
اللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَدَنِيْ، اللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ سَمْعِيْ، اللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَصَرِيْ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ، اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ، وَالْفَقْرِ، اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ .
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সাময়ি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাসারি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি, ওয়াল ফাকরি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাকে শারীরিক সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করুন। হে আল্লাহ! আমার শ্রবণে সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করুন। আমার দৃষ্টিতে সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করুন। আপনি ব্যতিত কোনো ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি কুফুরী ও দারিদ্র্য থেকে। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে পানাহ চাই কবরের আজাব থেকে। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।’ (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
– সময় পেলেই নিজেকে অপরাধী ভেবে বেশি বেশি দোয়ায়ে ইউনুছ পড়া-
لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحٰنَكَ اِنِّیْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِیْنَ.
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা