শিরোনাম
করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসায়ীদের ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে পোর্ট ডেমারেজ (বন্দর ও শিপিং লাইনের ক্ষতিপূরণ)। আপৎকালীন সময়ে সরকার ঘোষিত ১০ দিনের ছুটির মধ্যে খাদ্যপণ্য ও ওষুধসামগ্রী ছাড়া বর্তমানে আর কোনো কিছু খালাস করছে না কাস্টমস।
ফলে এর বাইরে থাকা শিল্পের কাঁচামালের বিপুলসংখ্যক কনটেইনার খালাস আটকে গেছে। কিন্তু এতে করে শুধু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যাহত হবে না, উল্টো মোটা অংকের ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে আমদানিকারকদের।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অনেকে যুগান্তরকে জানিয়েছেন, এমনিতে করোনার প্রভাবে বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সেজন্য তাদের সাফ কথা, কোনো ক্ষতিপূরণ তাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব হবে না।
সরকার নিশ্চয় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এ সময়ে বন্দর-প্রাইভেট আইসিডির সব ধরনের ডেমারেজ মওকুফ করার বিষয়ে জরুরিভিত্তিতে সার্কুলার জারি করবে। এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘চলমান ছুটিতে সরকার বন্দর, কাস্টমসসহ জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত আকারে খোলা রাখার কথা বলেছে। কিন্তু লোকবল স্বল্পতার কারণে বন্দর থেকে মালামাল খালাসে বিলম্ব হচ্ছে।
একদিকে এক্সপোর্ট বন্ধ, অন্যদিকে বন্দরে মালামাল পড়ে থাকায় পোর্ট ডেমারেজ দিতে হবে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা ক’দিক সামাল দেবেন। তাই সরকারকে এসব বিষয় বিবেচনায় এনে শিল্পের স্বার্থে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে হবে।’
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি কনটেইনার জাহাজ থেকে নামার পর ৪ দিন ফ্রি টাইম থাকে। এরপর বিভিন্ন স্ল্যাবে (স্তর) ডেমারেজ গুনতে হয় আমদানিকারককে।
২০ ফিট কনটেইনারের ক্ষেত্রে প্রথম সপ্তাহের জন্য ৬ ডলার, দ্বিতীয় সপ্তাহের জন্য ১২ ডলার এবং তৃতীয় সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন ২৪ ডলার করে ডেমারেজ গুনতে হয়। ৪০ ফিট কনটেইনারের ক্ষেত্রে এ জরিমানা দ্বিগুণ হারে গুনতে হয়।
একইভাবে আমদানিকারককে শিপিং লাইনের ডেমারেজও গুনতে হয়। শিপিং লাইনগুলোর জরিমানার হার একেক শিপিং লাইন একেকভাবে নির্ধারণ করে থাকে। তারা ৭ দিন থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত ফ্রি টাইম দিয়ে থাকে।
এরপর বিভিন্ন স্ল্যাবে ৬ ডলার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪৮ ডলার পর্যন্ত দৈনিক কনটেইনার প্রতি জরিমানা গুনতে হয়। অর্থাৎ আমদানি পণ্য গ্রহণ করে খালি কনটেইনার তাদের (শিপিং লাইনকে) বুঝিয়ে না দেয়া পর্যন্ত আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের শত শত কোটি টাকা এভাবে জরিমানা গুনতে হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, ‘এনবিআর থেকে এই আপৎকালীন সময়ে খাদ্যপণ্য ও ওষুধসামগ্রী জরুরিভিত্তিতে খালাসের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ কারণে শিল্পের কাঁচামাল শুল্কায়ন আপাতত বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি এনবিআরকে জানানো হয়েছে।
আগামীকাল (সোমবার) এ ব্যাপারে নির্দেশনা আসবে বলে আশা করছি। কাস্টমস কর্মকর্তাদের সবাইকে স্টেশনে থাকতে বলা হয়েছে। এনবিআরের নির্দেশনা পেলেই শিল্পের কাঁচামাল, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার পণ্য শুল্কায়ন শুরু হবে।’
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে এমনিতেই আমদানিকারক ও শিল্পকারখানার মালিকরা শিল্পের কাঁচামাল না পেয়ে উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ কারণে তারা শত শত কোটি কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়বেন।
তার ওপর আমদানি পণ্য বন্দরে বা ডিপোতে পড়ে থাকার কারণে তাদের গলায় বসবে ডেমারেজ চার্জের খক্ষ। এমনিতে বন্দর-কাস্টমসের প্রক্রিয়াগত জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা কারণে সময়মতো কনটেইনার হাতে না পেয়ে কোটি কোটি টাকার ডেমারেজ গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের।
এখন আবার করোনার কারণে স্থবির হয়ে যাওয়া ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যও ব্যবসায়ীদের এমন মাশুল দিতে হলে তারা যাবেন কোথায়।
আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেহেতু আমদানি-রফতানি বাণিজ্য স্থবির হয়ে গেছে, ব্যবসায়ীরাও আর লোকসান গুনতে পারছেন না- এ অবস্থায় বন্দর তথা শিপিং লাইনের ডেমারেজসহ যত ধরনের সারচার্জ আছে তা মওকুফ করার বিষয়ে সরকারকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জারি করতে হবে সার্কুলার। নয়তো ব্যবসায়ীরা যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন তাতে তাদের আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না
বিজিএমইএর সহ-সভাপতি এএম চৌধুরী সেলিম যুগান্তরকে বলেন, ‘বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি কমে গেছে। শিল্পের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহন অনেকটাই কমে এসেছে। এতে করে বন্দরে ভয়াবহ কনটেইনার জট দেখা দিতে পারে। এরই মধ্যে ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা পণ্য এনে বিপাকে পড়েছেন। তারা কল-কারখানায় উৎপাদন যেমন করতে পারছেন না কাঁচামালের অভাবে তেমনি পণ্যও ছাড়িয়ে নিতে পারছেন না।
এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের দু’দিকেই ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। একদিকে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় তারা লোকসান গুনছেন। অন্যদিকে বন্দর-শিপিং লাইনকে কনটেইনারের বিপরীতে ডেমারেজ গুনতে হবে।
আমি আশা করব, সরকার ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের এ ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করবে
নামাজের সময়সূচি | |
---|---|
December 4, 2024 | |
Fajr | 5:06 am |
Sunrise | 6:22 am |
Zuhr | 11:48 am |
Asr | 3:35 pm |
Maghrib | 5:14 pm |
Isha | 6:31 pm |
Dhaka, Bangladesh |